কলাম

ছাই থেকে সোনা হয় যে গ্রামে

সারা দেশে সোনার গয়না তৈরির দোকানের পরিত্যক্ত ছাই সংগ্রহ করে তা থেকে বিশেষ পদ্ধতিতে সোনা বের করেন মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার চারিগ্রাম গোবিন্দল গ্রামের মানুষ প্রায় ২০০ বছর আগে থেকে এটিই এখানকার শিল্প শুধু সোনা নয়, এই ছাই থেকে রুপা, তামা, সিসা ব্রোঞ্জও সংগ্রহ করা হয় প্রায় চার হাজার পরিবারের আয়ের অন্যতম উৎস সোনা সংগ্রহের এই শিল্প

শ্রাবণ মাস।আকাশে মেঘ-বৃষ্টির খেলা। গ্রামের সবুজ প্রকৃতি দেখব বলেই এক সকালে পা রাখি মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলায়। এখানে এক গ্রামের কথা জানি। সেই গ্রামে নাকি সোনার হাট বসে। সোনা কিনতে সারা দেশ থেকে আসেন দোকানিরা।

হাটটি জমে ওঠে প্রতি শুক্র ও সোমবার। স্থানীয় উদ্যোগী এক যুবক আমিনুল। তাঁর মুখেই শুনি গ্রামটির কথা।

দিনটিও ছিল সোমবার। ফলে গ্রাম্য হাটে সোনার বিকিকিনি দেখব বলেই চলে যাই চারিগ্রাম বাজারে।

গ্রাম্য বাজার হলেও আধুনিকতার বেশ ছাপ রয়েছে এখানে। বড় একটি বটগাছ। সেটিকে ঘিরেই গড়ে উঠেছে জুয়েলারির শতাধিক ছোট দোকান।

দোকানগুলো এখন পাকা হলেও বটের ছায়ায় সোনার কেনাবেচা চলছে প্রায় ২০০ বছর আগে থেকে। ফলে এটি এখন মানিকগঞ্জের ঐতিহ্য।

এই গ্রাম্য হাটে সোনা আসে কোথা থেকে? এ নিয়ে আলাপ হয় ফরিদ হোসেন দেওয়ানের সঙ্গে। এখানে পাঁচ পুরুষ ধরে সোনার ব্যবসা করছেন তাঁরা। বর্তমানে এখানকার জুয়েলারি মালিক সমিতির সভাপতিও তিনি।

মূলত সারা দেশে সোনার গয়না তৈরির দোকানের পরিত্যক্ত ছাই সংগ্রহ করে তা থেকে বিশেষ পদ্ধতিতে সোনা বের করেন এ উপজেলার চারিগ্রাম ও গোবিন্দল গ্রামের মানুষ। এটিই এখানকার শিল্প। প্রায় চার হাজার পরিবারের আয়ের অন্যতম উৎস সোনা সংগ্রহের এ শিল্পটি। ছাইমাটি থেকে সোনা বের করাকে স্থানীয়ভাবে বলে ‘ছালি ব্যবসা’।

শুধু সোনা নয়, এই ছাই থেকে রুপা, তামা, সিসা ও ব্রোঞ্জও সংগ্রহ করা হয়। অতঃপর সেসবেরই বিকিকিনি চলে চারিগ্রাম বাজারে গড়ে ওঠা জুয়েলারি দোকানগুলোতে। সোনার গুণগত মান ভালো এবং দাম কিছুটা সস্তা হওয়ায় এখানকার সোনার চাহিদা রয়েছে পুরো দেশেই।

কিন্তু ছাই থেকে কিভাবে সোনা বের করা হয়?

জানা যায়, সোনার দোকান থেকে সংগ্রহ করা ছাই প্রথমে ছাঁকন পদ্ধতিতে ছেঁকে একটি চালনিতে চালতে হয়। পরে তা ঢেঁকিতে ছেঁটে পরিষ্কার পানির সঙ্গে মিশিয়ে পিণ্ড তৈরি করা হয়।

৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, কালের কণ্ঠ

অতঃপর সেই পিণ্ডগুলোকে ভালো করে রোদে শুকিয়ে নেন ছালি ব্যবসায়ীরা। শুকনা পিণ্ডগুলোতে আগুনের তাপ দেন তাঁরা। ফলে পিণ্ডগুলো থেকে ময়লা বের হয়ে যায়। তখন এর বাকি অংশে জড়িয়ে থাকে সোনা, রুপা, তামা, সিসা ও ব্রোঞ্জ।

এরপর তরল এই পদার্থকে মাটিতে গর্ত করে চুন ও ধানের তুষ দিয়ে পুড়িয়ে সিসা বের করে আনা হয়। ছাঁকনি দিয়ে ছেঁকে পানিতে ধুয়ে আলাদা করা হয় সিসাগুলোকে। বাকি অংশ থেকে নাইট্রিক এসিড এবং আরো কিছু কেমিক্যাল মিশিয়ে আলাদা করা হয় সোনা ও রুপা। এভাবেই ছাই থেকে সোনা ও রুপা সংগ্রহ করেন ছালি ব্যবসায়ীরা। সেই সোনা বিক্রি হয় হাটে।

কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, মূলত ছাই কেনার ওপর ভিত্তি করেই সোনা মেলে। কিন্তু অনেক সময় বেশি দামে ছাই কিনেও আশানুরূপ সোনা পাওয়া যায় না। প্রতি মাসে অনেকে দুই থেকে তিন ভরি পর্যন্ত সোনা পান আবার অনেকে এক ভরিও পান না। ব্যাবসায়িক অভিজ্ঞতা এবং ভাগ্যের ওপর নির্ভরশীল এই শিল্পটি।

সাধারণ সময়ে এই বাজারে দৈনিক ৫০ লাখ টাকার সোনা কেনাবেচা হয়। তবে ভাদ্র ও চৈত্র মাসে বিক্রি হয় সবচেয়ে বেশি। তখন প্রতিদিন সোনা কেনাবেচা হয় প্রায় পাঁচ কোটি টাকার ওপরে, যা দেশের অর্থনীতিতেও বিশেষ ভূমিকা রাখছে।

তবে মূলধন কম থাকা এবং ছাই কিনে আনার সময় নিরাপত্তাসহ নানা ভোগান্তি পোহাতে হয় ব্যবসায়ীদের। ফলে ছাই থেকে সোনা করার এ শিল্পটিও এখন ঝুঁকিতে রয়েছে। সরকার উদ্যোগ নিলে এই শিল্পটিও গতিময় হবে বলে মনে করেন সবাই।

দোকানগুলো এখন পাকা হলেও বটের ছায়ায় সোনার কেনাবেচা চলছে প্রায় ২০০ বছর আগে থেকে। ফলে এটি এখন মানিকগঞ্জের ঐতিহ্য।

এই গ্রাম্য হাটে সোনা আসে কোথা থেকে? এ নিয়ে আলাপ হয় ফরিদ হোসেন দেওয়ানের সঙ্গে। এখানে পাঁচ পুরুষ ধরে সোনার ব্যবসা করছেন তাঁরা। বর্তমানে এখানকার জুয়েলারি মালিক সমিতির সভাপতিও তিনি।

মূলত সারা দেশে সোনার গয়না তৈরির দোকানের পরিত্যক্ত ছাই সংগ্রহ করে তা থেকে বিশেষ পদ্ধতিতে সোনা বের করেন এ উপজেলার চারিগ্রাম ও গোবিন্দল গ্রামের মানুষ। এটিই এখানকার শিল্প। প্রায় চার হাজার পরিবারের আয়ের অন্যতম উৎস সোনা সংগ্রহের এ শিল্পটি। ছাইমাটি থেকে সোনা বের করাকে স্থানীয়ভাবে বলে ‘ছালি ব্যবসা’।

শুধু সোনা নয়, এই ছাই থেকে রুপা, তামা, সিসা ও ব্রোঞ্জও সংগ্রহ করা হয়। অতঃপর সেসবেরই বিকিকিনি চলে চারিগ্রাম বাজারে গড়ে ওঠা জুয়েলারি দোকানগুলোতে। সোনার গুণগত মান ভালো এবং দাম কিছুটা সস্তা হওয়ায় এখানকার সোনার চাহিদা রয়েছে পুরো দেশেই।

কিন্তু ছাই থেকে কিভাবে সোনা বের করা হয়?

জানা যায়, সোনার দোকান থেকে সংগ্রহ করা ছাই প্রথমে ছাঁকন পদ্ধতিতে ছেঁকে একটি চালনিতে চালতে হয়। পরে তা ঢেঁকিতে ছেঁটে পরিষ্কার পানির সঙ্গে মিশিয়ে পিণ্ড তৈরি করা হয়।

অতঃপর সেই পিণ্ডগুলোকে ভালো করে রোদে শুকিয়ে নেন ছালি ব্যবসায়ীরা। শুকনা পিণ্ডগুলোতে আগুনের তাপ দেন তাঁরা। ফলে পিণ্ডগুলো থেকে ময়লা বের হয়ে যায়। তখন এর বাকি অংশে জড়িয়ে থাকে সোনা, রুপা, তামা, সিসা ও ব্রোঞ্জ।

এরপর তরল এই পদার্থকে মাটিতে গর্ত করে চুন ও ধানের তুষ দিয়ে পুড়িয়ে সিসা বের করে আনা হয়। ছাঁকনি দিয়ে ছেঁকে পানিতে ধুয়ে আলাদা করা হয় সিসাগুলোকে। বাকি অংশ থেকে নাইট্রিক এসিড এবং আরো কিছু কেমিক্যাল মিশিয়ে আলাদা করা হয় সোনা ও রুপা। এভাবেই ছাই থেকে সোনা ও রুপা সংগ্রহ করেন ছালি ব্যবসায়ীরা। সেই সোনা বিক্রি হয় হাটে।

কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, মূলত ছাই কেনার ওপর ভিত্তি করেই সোনা মেলে। কিন্তু অনেক সময় বেশি দামে ছাই কিনেও আশানুরূপ সোনা পাওয়া যায় না। প্রতি মাসে অনেকে দুই থেকে তিন ভরি পর্যন্ত সোনা পান আবার অনেকে এক ভরিও পান না। ব্যাবসায়িক অভিজ্ঞতা এবং ভাগ্যের ওপর নির্ভরশীল এই শিল্পটি।

সাধারণ সময়ে এই বাজারে দৈনিক ৫০ লাখ টাকার সোনা কেনাবেচা হয়। তবে ভাদ্র ও চৈত্র মাসে বিক্রি হয় সবচেয়ে বেশি। তখন প্রতিদিন সোনা কেনাবেচা হয় প্রায় পাঁচ কোটি টাকার ওপরে, যা দেশের অর্থনীতিতেও বিশেষ ভূমিকা রাখছে।

তবে মূলধন কম থাকা এবং ছাই কিনে আনার সময় নিরাপত্তাসহ নানা ভোগান্তি পোহাতে হয় ব্যবসায়ীদের। ফলে ছাই থেকে সোনা করার এ শিল্পটিও এখন ঝুঁকিতে রয়েছে। সরকার উদ্যোগ নিলে এই শিল্পটিও গতিময় হবে বলে মনে করেন সবাই।

লেখাটি প্রকাশিত হয়েছে দৈনিক কালের কণ্ঠের শেষের পাতায়, প্রকাশকাল: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪

© 2024, https:.

এই ওয়েবসাইটটি কপিরাইট আইনে নিবন্ধিত। নিবন্ধন নং: 14864-copr । সাইটটিতে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো তথ্য, সংবাদ, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Show More

Salek Khokon

সালেক খোকনের জন্ম ঢাকায়। পৈতৃক ভিটে ঢাকার বাড্ডা থানাধীন বড় বেরাইদে। কিন্তু তাঁর শৈশব ও কৈশোর কেটেছে ঢাকার কাফরুলে। ঢাকা শহরেই বেড়ে ওঠা, শিক্ষা ও কর্মজীবন। ম্যানেজমেন্টে স্নাতকোত্তর। ছোটবেলা থেকেই ঝোঁক সংস্কৃতির প্রতি। নানা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। যুক্ত ছিলেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ও থিয়েটারের সঙ্গেও। তাঁর রচিত ‘যুদ্ধদিনের গদ্য ও প্রামাণ্য’ গ্রন্থটি ২০১৫ সালে মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক মৌলিক গবেষণা গ্রন্থ হিসেবে ‘কালি ও কলম’পুরস্কার লাভ করে। মুক্তিযুদ্ধ, আদিবাসী ও ভ্রমণবিষয়ক লেখায় আগ্রহ বেশি। নিয়মিত লিখছেন দেশের প্রথম সারির দৈনিক, সাপ্তাহিক, ব্লগ এবং অনলাইন পত্রিকায়। লেখার পাশাপাশি আলোকচিত্রে নানা ঘটনা তুলে আনতে ‘পাঠশালা’ ও ‘কাউন্টার ফটো’ থেকে সমাপ্ত করেছেন ফটোগ্রাফির বিশেষ কোর্স। স্বপ্ন দেখেন মুক্তিযুদ্ধ, আদিবাসী এবং দেশের কৃষ্টি নিয়ে ভিন্ন ধরনের তথ্য ও গবেষণামূলক কাজ করার। সহধর্মিণী তানিয়া আক্তার মিমি এবং দুই মেয়ে পৃথা প্রণোদনা ও আদিবা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back to top button