কলাম

৫৩ বছর পর পাওয়া শুভেচ্ছায় আপ্লুত শহীদের স্ত্রী রহিমা খাতুন

আঞ্চলিক প্রতিবেদক, বগুড়া।সকাল-সন্ধ্যা

স্বাধীনতার পর পেরিয়ে গেছে ৫০ বছরেরও বেশি সময়। অবশেষে ফুলেল শুভেচ্ছা পেয়ে আপ্লুত মুক্তিযুদ্ধে শহীদ আব্দুল ওহাবের স্ত্রী রহিমা খাতুন।

সকাল সন্ধ্যায় সম্প্রতি ‘বগুড়া ডিসি অফিস কি জানে শহীদ আব্দুল ওহাবের নাম’ শীর্ষক কলাম প্রকাশিত হয়। এর পর তার স্ত্রী রহিমা খাতুনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আতিকুল ইসলাম।

স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ১৯৭১ সালের ২৫ এপ্রিল সকালে বিহারীদের হাতে নির্মমভাবে খুন হন তৎকালীন ভূমি অফিসের এলডিএ (লোয়ার ডিভিশনাল অ্যাসিস্ট্যান্ট) আব্দুল ওহাব। কিন্তু স্বাধীনতার এতো বছর পেরিয়ে গেলেও আব্দুল ওহাবের নাম রয়ে যায় আড়ালে।

গত ২৫ এপ্রিল আব্দুল ওহাবের শহীদ হওয়ার সেই লুপ্তপ্রায় ঘটনাটি সকাল সন্ধ্যায় তুলে ধরেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক ও লেখক সালেক খোকন। লেখাটি নজরে আসে রাজশাহীর জেলা প্রশাসক শামিম আহমেদের। পরে তার নির্দেশনায় সোমবার বিকালে ফুল নিয়ে সাক্ষাৎ করতে যান গোদাগাড়ীর ইউএনও।

ইউএনও আতিকুল ইসলাম বলেন, “আব্দুল ওহাব আমাদের দপ্তরের একজন সদস্য ছিলেন। স্বাধীনতার যুদ্ধে তিনি প্রাণ হারান। পত্রিকায় এ বিষয়ে জানার পর আমরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে তার স্ত্রী রহিমা খাতুনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গিয়েছি। বয়স্ক একজন মানুষ তিনি। এ জন্য ফুল, ফল ও কিছু সৌজন্য সম্মাননা নিয়ে দেখা করি। তার সঙ্গে আলাপ হলো। ওই সময়ের ঘটনা শুনলাম তার মুখে।”

উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাক্ষাৎ করতে আসায় আব্দুল ওহাবের স্ত্রী ও মেয়েরা আবেগে আপ্লুত। দীর্ঘদিন ধরে মেয়েরা সংগ্রাম করেছেন বাবার শহীদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠায়।

আব্দুল ওহাবের স্ত্রী রহিমা খাতুন বলেন, “শহীদের স্বীকৃতির জন্য আমরা অনেক চেষ্টা করেছি। অনেক জায়গায় গিয়েছি। কিন্তু আমাকে কোথাও মূল্যায়ন করেনি। এখন আর কোথাও যেতে পারি না। আমার মেয়েরা দৌড়াদৌড়ি করে।

“সেদিন বড় মেয়ে ফোন করে বলেছিল মা তোমার ওখানে গোদাগাড়ী ইউএনও যেতে পারেন। শুনে ভাবলাম যাক আমার সৌভাগ্য, যে এতদিন পর হলেও তারা আসছেন। তিনি ফুল নিয়ে আসলেন। আমাকে একটা খাম দিয়েছিলেন, সেখানে টাকা ছিল।”

গোদাগাড়ীতে মেজো মেয়ে সেলিনা খাতুন লিমার সঙ্গেই থাকেন রহিমা খাতুন। তিনি রাজশাহী জেলা প্রশাসক ও গোদাগাড়ী ইউএনওর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

আব্দুল ওহাবের বড় মেয়ে নাসিমা খাতুন সীমা বলেন, “আমরা নতুন করে আশার আলো দেখছি। আমার আব্বা শহীদ হওয়ার পর আমরা দিশেহারা ছিলাম। তার পেনশনের টাকা তুলতে গিয়ে অনেক দৌড়ঝাঁপ করতে হয়েছে। ২০১৮ সালে সেই টাকা পেয়েছি।”

স্বাধীনতার পর তিন বোনের বড় হওয়ার পথে সবচেয়ে বেশি কষ্ট পেতে হয়েছে বলে জানান নাসিমা খাতুন।

তিনি বলেন, “ওই সময় মানুষের প্রচুর কটু কথা শুনতে হতো আমাদের। এখন আর কোনও কষ্ট নেই। আমাদের শহীদ ভাতা বা অন্য কিছু তো দরকার নেই। তার নাম শুধু শহীদের তালিকায় থাকলেই আমাদের শান্তি।”

বগুড়ার তৎকালীন ভূমি অফিসের এলডিএ এবং স্টাফ কোয়ার্টারের বাসিন্দা হওয়ায় আব্দুল ওহাবের বিষয়ে জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলামকে একাধিকবার ফোন দেওয়া হয়। তিনি রিসিভ না করায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

রাজশাহীর জেলা প্রশাসক শামিম আহমেদ বলেন, “ওখানে ইউএনও গিয়েছিল। আমি পরে ইউএনওকে ডাকব এ বিষয়ে আলোচনার জন্য। উনাদের যেন আইনগতভাবে সহযোগিতা করা যায়, সে বিষয়ে আন্তরিক চেষ্টা করব।”

শহীদ আব্দুল ওহাবের বাবার নাম করিম বক্স ও মা ময়না বিবি। রাজশাহীর গোদাগাড়ি উপজেলার হরিশঙ্করপুর গ্রামে তার বাড়ি।

১৯৫২ সালে এলডিএ হিসেবে তিনি চাকরিতে যোগ দেন। প্রথম পোস্টিং ছিল নাটোরের লালপুর থানার বিলমাড়িয়া ভূমি অফিসে। এরপর বদলি হয়ে প্রথমে বগুড়া জেলার সারিয়াকান্দি থানার বুড়িমারী ভূমি অফিসে এবং পরে মালতীনগর ভূমি অফিসে যান। স্ত্রী রহিমা খাতুন, আর তিন মেয়ে নিয়ে ছিল তার সংসার।

সংবাদিটি প্রকাশিত হয়েছে সকাল সন্ধ্যা ডটকমে, প্রকাশকাল: ১ মে ২০২৪

© 2024, https:.

এই ওয়েবসাইটটি কপিরাইট আইনে নিবন্ধিত। নিবন্ধন নং: 14864-copr । সাইটটিতে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো তথ্য, সংবাদ, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Show More

Salek Khokon

সালেক খোকনের জন্ম ঢাকায়। পৈতৃক ভিটে ঢাকার বাড্ডা থানাধীন বড় বেরাইদে। কিন্তু তাঁর শৈশব ও কৈশোর কেটেছে ঢাকার কাফরুলে। ঢাকা শহরেই বেড়ে ওঠা, শিক্ষা ও কর্মজীবন। ম্যানেজমেন্টে স্নাতকোত্তর। ছোটবেলা থেকেই ঝোঁক সংস্কৃতির প্রতি। নানা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। যুক্ত ছিলেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ও থিয়েটারের সঙ্গেও। তাঁর রচিত ‘যুদ্ধদিনের গদ্য ও প্রামাণ্য’ গ্রন্থটি ২০১৫ সালে মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক মৌলিক গবেষণা গ্রন্থ হিসেবে ‘কালি ও কলম’পুরস্কার লাভ করে। মুক্তিযুদ্ধ, আদিবাসী ও ভ্রমণবিষয়ক লেখায় আগ্রহ বেশি। নিয়মিত লিখছেন দেশের প্রথম সারির দৈনিক, সাপ্তাহিক, ব্লগ এবং অনলাইন পত্রিকায়। লেখার পাশাপাশি আলোকচিত্রে নানা ঘটনা তুলে আনতে ‘পাঠশালা’ ও ‘কাউন্টার ফটো’ থেকে সমাপ্ত করেছেন ফটোগ্রাফির বিশেষ কোর্স। স্বপ্ন দেখেন মুক্তিযুদ্ধ, আদিবাসী এবং দেশের কৃষ্টি নিয়ে ভিন্ন ধরনের তথ্য ও গবেষণামূলক কাজ করার। সহধর্মিণী তানিয়া আক্তার মিমি এবং দুই মেয়ে পৃথা প্রণোদনা ও আদিবা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back to top button