তোমরাই হবে আগামী দিনের মুক্তিযোদ্ধা
দেশে নানা সমস্যা থাকলেও আগামী প্রজন্মের হাত ধরেই এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ—এমনটাই বিশ্বাস বীরপ্রতীক আনিসুর রহমানের।
“মে ১৯৭১। ট্রেনিং থেকে ফিরে পুরোপুরি যুদ্ধে নেমে পড়ি। নিজের নামেই ছিল কোম্পানির নাম ‘আনিস কোম্পানি’। ১৪২ জন মুক্তিযোদ্ধা ছিল ওই কোম্পানিতে। অস্ত্র ছিল এলএমজি, চাইনিজ রাইফেল, এসএমজি, থ্রি নট থ্রি, গ্রেনেড। সবাই ইয়ং আর সাহসী। হুকুম দেবার সঙ্গে সঙ্গেই সবাই অপারেশনে নেমে পড়ত। ডু অর ডাই। দুর্ধর্ষ ও দুর্দমনীয় মনোভাব নিয়েই ওরা লড়াই করেছে। সহযোদ্ধারাই ছিল একাত্তরে সবচেয়ে আপন। স্বাধীনের পর তাদের প্রত্যেককে আমি বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আসছি। কোম্পানি টুয়াইসি ছিল নুরুল আমিন। একাত্তরেই সে শহীদ হয়। তার কথা এখনও খুব মনে পড়ে।
আমাদের আক্রমণের ধরন ছিল—হিট অ্যান্ড রান, গেরিলা ট্যাকটিস। রাতের আঁধারে পাকিস্তানি সেনাদের ক্যাম্পে হিট করেই সরে যেতাম। ওরা গুলি চালাত সারারাত। এটাই ছিল কৌশল। ওয়ান হিট, হানড্রেট রিটার্ন। এভাবেই পাকিস্তানি সেনাদের প্রচুর গুলি খরচ করাতাম আমরা।
সাধারণ মানুষই ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের শক্তি। তারা খাবার দিছে, নানা খবর দিয়ে সহযোগিতাও করেছে। সরিষাবাড়ীর কবলিবাড়ির চরে ছিল আমার ক্যাম্প। সেখানে অস্থায়ী ঘর ও খামার ছিল। ফলে গোটা চরটা ছিল আত্মগোপনের জন্য নিরাপদ জায়গা। চরের বিভিন্ন বাড়িতে থাকতাম। রাতে অপারেশনের জন্য বের হতাম। কেউ চিনত না। পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে চলত গোলাগুলি। সকালের দিকে দেখতাম মানুষ বলাবলি করছে, ‘আজ রাতে তো অনেক গুলি ফুটাইছে। এহানে কে আইছিল?’ কেউ কেউ গর্ব নিয়ে বলত, ‘আনিস কোম্পানি’। সাধারণ মানুষের এমন মনোভাব আমাদের অনুপ্রাণিত ও সাহসী করে তোলে। বেঁচে থাকব কিনা জানি না। কিন্তু বুকের ভেতর তখন একটাই চিন্তা—কবে এ দেশ থেকে পাকিস্তানিদের হটাব। দেশটাকে স্বাধীন করব।”
নানা ঘটনা তুলে ধরে এভাবেই একাত্তরের স্মৃতিচারণ করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আনিসুর রহমান (বীরপ্রতীক)। এক বিকেলে তার বাড়িতে বসেই আলাপ চলে একাত্তরের নানা প্রসঙ্গে।
মকবুল হোসেন তালুকদার ও আমিনা বেগমের দ্বিতীয় সন্তান আনিসুর। বাড়ি জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ী উপজেলার স্থল উত্তরপাড়া গ্রামে। শৈশব ও কৈশোর কেটেছে গ্রামের বাড়িতেই। তার লেখাপড়ায় হাতেখড়ি স্থল প্রাইমারি স্কুলে। এসএসসি পাশ করেন পিংনা হাই স্কুল থেকে, ১৯৬৪ সালে। অতঃপর টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তি হন, ঢাকার তেজগাঁওয়ে। ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করার পর তিনি চাকরি নেন নরসিংদীর আলিজান জুট মিলে। মুক্তিযুদ্ধের সময় ওই জুট মিলেরই জিএম ছিলেন।
আনিসুর বঙ্গবন্ধুর সাতই মার্চের ভাষণ শোনেন রেডিওতে। ওই ভাষণই তার জীবনের গতিপথ পাল্টে দেয়। কর্মজীবন ছেড়ে দেশের জন্য যুদ্ধের পথে নামেন তিনি।
তার ভাষায়, “বঙ্গবন্ধুর পুরো ভাষণটাই মনে দাগ কেটে যায়। নানা ঘটনা তুলে ধরে শেষে তিনি বললেন, ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ এই কথাগুলো ভেতরটাকে নাড়িয়ে দেয়। বুঝে যাই দেশের জন্য কিছু একটা করতে হবে। ফলে চাকরি ফেলে ফিরে আসি গ্রামের বাড়িতে।”
এরপর কী করলেন?
আনিসুর বলেন, “বাবাও ছিলেন সংগ্রামের চেতনাবোধে উজ্জীবিত। তিনি বলতেন, ‘পরাধীনতা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। তা না হলে বাইচা লাভ নাই।’ বাড়িতে তখন অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী। তবুও পরিবারের মায়া ত্যাগ করে স্ত্রীকে রেখেই যুদ্ধে যাওয়ার পরিকল্পনা করি। স্ত্রীও মানা করেনি। সে জানে স্বামী একরোখা। পাকিস্তানিরা যেভাবে মানুষ মারতেছে বাবা-মাও অনুপ্রাণিত করছেন যুদ্ধে যেতে। তারা বলেছেন, ‘তোমার এখানে থাকার দরকার নাই। তুমি যাও। কিছু একটা করো।’
১৭ এপ্রিলে যুদ্ধে যাওয়ার জন্য বাড়ি ছাড়ি। নদী পথে চলে যাই ভারতের মহেন্দ্রগঞ্জ ক্যাম্পে। সঙ্গে ছিলেন ছোট ভাই মতিউর রহমান, চাচাত ভাই ইয়াকুব আলী, নূর ইসলাম প্রমুখ। ওই ক্যাম্পেই নাম লেখাই। ওটা ছিল ১১ নম্বর সেক্টর হেডকোয়ার্টার। সেখানে কিছুদিন ট্রেনিং করিয়ে আমাদের পাঠিয়ে দেওয়া হয় ডালু ও তুরা ক্যাম্পে। টোটাল ট্রেনিং হয় আটাশ দিন।”
ট্রেনিং কি খুব সহজ ছিল?
“অবশ্যই না। কিন্তু আমাদের সঙ্গে কলেজের ছেলেরাই ছিল বেশি ছিল। তারা সহজেই ট্রেনিংটা বুঝতে পারত। নিজেই ইঞ্জিনিয়ার। ফলে ট্রেনিংয়ে আমার পারফরমেন্স ছিল ভালো। ওরা হিন্দিতে বলত। আমি সেটা বাংলায় তরজমা করে ছেলেদের বোঝাতাম। পরে আমাকে একটা কোম্পানি করে দেওয়া হয়।”
ট্র্রেনিং শেষে আনিসুররা অস্ত্র পান মহেন্দ্রগঞ্জ থেকে। এরপরই চলে যান রণাঙ্গনে, নিজ এলাকায়। ১১ নম্বর সেক্টরের অধীনে তার কোম্পানি অপারেশন করে বাহাদুরবাদ ঘাট, ভূঞাপুর, ধনবাড়ি, মধুপুর প্রভৃতি এলাকায়।
বাহাদুরবাদ ঘাটে একটা দুর্ধর্ষ অপারেশন করেন বীরপ্রতীক আনিসুররা। ওই অপারেশনে ঘাটে থাকা চারটি ফেরি ও পাকিস্তানি সেনাদের একটি স্টিমার তারা ডুবিয়ে দিতে সক্ষম হন। কীভাবে তা সম্ভব হলো। এ বীরপ্রতীকের মুখে শুনি অপারেশনটির আদ্যোপান্ত।
তার ভাষায়, “বাহাদুরাবাদ ঘাটটি জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার অন্তর্গত। ১৯৭১ সালে এ ঘাটটি ছিল যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম। বিপরীত দিকে ফুলছড়ি ঘাট। ভারতের মেঘালয়, কোচবিহার ও দার্জিলিং থেকে নদীপথে এ এলাকা হয়েই দেশের ভেতর ঢুকতেন মুক্তিযোদ্ধারা। সে কারণে বাহাদুরাবাদ ঘাটে ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সার্বক্ষণিক নজরদারি। নৌকা আসলেই তারা তা আটকে দিত।
সেপ্টেম্বর মাসের শেষের কথা। আমাদের ক্যাম্প তখন কবলিবাড়ির চরে। একদিন ৪ জন নেভাল সদস্য আসেন। তারা আমার সঙ্গে দেখা করে জানালেন বাহাদুরাবাদ ঘাট অপারেশনের কথা। হেল্পও চাইলেন। আগেই আমাদেরও মূল টার্গেট ছিল এ ঘাটটি।
তখনই সবাইকে ফলিং করালাম। অপারেশনে কারা কারা যেতে চাও, ফিরে নাও আসতে পারো? এমন প্রশ্নে সবাই বলে, ‘আমি যাব’। আমরা তিনটি ছেলেকে বেছে নিলাম। নেভালের ৪ জনসহ আমরা আটজন তখন। নৌকা নেওয়া যাবে না। ফলে রাত দুটোর দিকে ছোট্ট কলাগাছের ভেলায় উপুড় হয়ে ভাসতে ভাসতে ঘাটের দিকে এগোই। ঘণ্টাখানেক পর পৌঁছে যাই। বাহাদুরবাদ ঘাটে তখন চারটা ফেরি আর একটা স্টিমার নোঙর করা ছিল।
নেভালের চারজন নিঃশব্দে তাতে মাইন ফিট করে। আমরা থাকি সহযোগিতায়। অতঃপর দ্রুত দূরে সরে যেতে থাকি। কিছুক্ষণ পরই মাইনগুলো বিষ্ফোরিত হয়ে ফেরি ও স্টিমার পানিতে তোলপাড় তুলে ডুবে যেতে থাকে।
পাকিস্তানি সেনা ও তাদের সহযোগীরাও তখন ছোটাছুটি করে এলোপাতাড়ি গুলি করতে থাকে। আমরা তখন পানির তোড়ে সবাই বিচ্ছিন্ন হয়ে যাই। নেভালের ওরা দ্রুত তীরে উঠে যায়। আমি তখনও নদীতে।
শীতের রাত। নদীতে ভাসতে ভাসতেই বাকি ছেলেদের খুঁজছি। কে কোথায় গেল জানি না। দেখলাম একটা আলো দেখা যাচ্ছে। আসলে আমার ছেলেরাই পাড়ে উঠে আমাকে খোঁজার জন্য খেড়ের বুন্দা বানিয়ে তাতে আগুন লাগায়া নদী পাড় দিয়া যাচ্ছে। ঠান্ডায় আর সাঁতার কেটে শরীরে কোনো শক্তি নাই। বহুকষ্টে আলো দেখে তীরের কাছাকাছি চলে আসছি। দেখলাম পাশ দিয়ে একটা কলা গাছের মোড়া ভেসে যাচ্ছে। আমি মোড়াটা ধরেই পাড়ে উঠতে পারব ভেবে সেটাকে বুকে জড়ায়া ধরতেই ওর ভেতর ঢুকে গেলাম। তখনই বুঝে যাই এটা কলাগাছের মোড়া নয়। একটা মরা লাশ। মারা গেছে কয়েকদিন আগে। লাশটার পেট ফুলে পচে গেছে। লাশের তেল আমার সারা শরীরে লেগে যায়। পরে সহযোদ্ধারা আমাকে তুলে নেয়। ক্যাম্পে ফিরে তারা গরম পানিতে ৫৭০ সাবান মিশিয়ে আমার গায়ে ঢেলে শরীর পরিষ্কার করে দেয়। শীতে তখনও ঠকঠক করে কাঁপছিলাম। পরে গোটা রাতই খেড়ের পালার ভেতর শুয়ে থাকি। শরীরে মানুষের চর্বির গন্ধটা ছিল অনেক দিন, অন্তত আমার এমন অনুভূতি হতো। একাত্তরের এমন ঘটনার কথা কীভাবে ভুলি বলেন।”
আনিসুরদের ওই অপারেশনের পর নৌপথে পাকিস্তানি সেনাদের বিচরণ কমে যায়। এ কারণেই বাহাদুরবাদ ঘাট এলাকা দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের অবাধ চলাচল সহজ হয়ে পড়ে।
মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার পর রাজাকাররাসহ পাকিস্তানি আর্মি আসে আনিসুরের বাড়িতে। তার বাবাকে নানাভাবে হুমকি দেয় তারা। বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়ারও ভয় দেখায়। প্রশ্ন করে, তোমার ছেলে মুক্তিযুদ্ধে গেছে? তিনি অকপটে বলেন, ‘হ্যাঁ গেছে’। কোনো মিথ্যার আশ্রয় নেন না তিনি। শুনে ওরা আরও ক্ষিপ্ত হয়।
পিংনা ইউনিয়নে রাজাকার ছিল কম। ঘুটি আর পিয়া মণ্ডল নামে দুজন রাজাকার ছিল। ওরা আগে মুসলিম লীগ করত। বিভিন্নভাবে মানুষের খোঁজখবর নিত। আনিসুরের বাবাকে বলত, ‘তোমার ছেলে কই? দেখি না। বুঝছি মুক্তিবাহিনীতে গেছে।’ নানা ধরনের টিটকারিও মারত।
রাজাকার প্রসঙ্গে এই বীর মুক্তিযোদ্ধা বলেন এভাবে, “ধনবাড়িতে রাজাকার অপারেশন করেছি। ওখানে রাজাকারের সংখ্যা ছিল বেশি। ইনফরমারদের মাধ্যমে খবর নিয়ে ওদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে আটক করি। তবে তাদের নিয়েই মেরে ফেলতাম না। মোটিভেট করার চেষ্টা করতাম। বলতাম, ‘আমরা যেটা করছি এটাই ঠিক। তোমরা যেটা করছ সেটা ঠিক না। আর্মিরা এক সময় তোমাদের ফালায়া দিয়া চলে যাবে। ওরা এখন ভাইয়ের বউকে রেইপ করছে। কয়েকদিন পর তোমার নিজের বউকেও রেইপ করবে। তখন কি করবা?’ অনেকেই মোটিভেট হয়ে স্বেচ্ছায় রাজাকারের দলও ছেড়েছিল তখন।
বয়স তখন ২৩ বছর। টগবগে যুবক। মানুষকে বোঝানোর পদ্ধতি দেখে লোকে আমাকে বলত জাদু জানে। এ অঞ্চলে কাদেরিয়া বাহিনীর গ্রুপও ছিল। কিন্তু আমাদের সঙ্গে তাদের সমন্বয় ছিল। অপারেশন করতে গিয়েও সমস্যা হয়নি। কারণ সবার উদ্দেশ্য ছিল একটাই—যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করা।”
মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধারা স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের চরমপত্র শুনতেন আর অনুপ্রাণিত হতেন আপেল মাহমুদের গান শুনে। অবসরে নিজেরাও নানা গান করতেন। বাঁশিও বাজাতেন কেউ কেউ। এগুলোই ছিল তাদের বিনোদন। মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত ছেলেরাই মুক্তিযুদ্ধে গেছে বেশি। একাত্তরে ছিল না কোনো ধর্মীয় ভেদাভেদ—এসব কথাও বলেন মুক্তিযোদ্ধা আনিসুর রহমান।
স্বাধীনতা লাভের পর সহযোদ্ধাদের নিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে যান এই বীরপ্রতীক। কি কথা হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে?
আনিসুর বলেন, “উনি আমাকে কাছে ডেকে নেন। বলেন, ‘কটা পাঞ্জাবি মেরেছিস? বাবা ভালো আছেন তো?’ এই কথাগুলো আমি আজও ভুলতে পারিনি। মনে হয়েছে উনি যেন আমার কত আপন।”
স্বাধীনতা লাভের পর এই বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব জুট মিলে জয়েন করেন, ম্যানেজার হিসেবে। পরে কওমি জুট মিলে চলে যান। ২০০৪ সালে জিএম হিসেবে সেখান থেকেই তিনি অবসরে যান।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর স্বাধীনতাবিরোধীদের নিয়ে সরকার গঠন করেন জিয়াউর রহমান। স্বাধীন দেশের লাল-সবুজ পতাকা উড়েছে রাজাকারদের গড়িতে। তখনকার অনুভূতি ব্যক্ত করেন এই বীরপ্রতীক, দীর্ঘঃশ্বাস ফেলে বলেন, “মরণই যে ভাল ছিল জ্বলনের চেয়ে। এই জ্বালা সহ্য করা কঠিন ছিল। মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান তখন মাটিতে মিশে গিয়েছিল। আরেক পাকিস্তান যুগের শুরু ছিল সেটা।”
কথা ওঠে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রসঙ্গে। তিনি অকপটে বলেন, “যখন কোনো অমুক্তিযোদ্ধা মুক্তিযোদ্ধা হয় আমার মাথা নষ্ট হয়ে যায়। সহ্য করতে পারি না। টাকা খেয়ে শেষ করে দেওয়া হয়েছে মুক্তিযোদ্ধার তালিকা। একবার মুক্তিযোদ্ধাদের যাচাই-বাছাইয়ের ইন্টারভিউ চলছে। নতুন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমার চাচাত ভাইয়ের নাম দিয়েছে। আমি বোর্ডে বসা। ডিস্ট্রিক কমান্ডার আমাকে জিজ্ঞেস করলে আমি তাকে শনাক্ত করিনি। এ জন্য এখনও সে আমার সঙ্গে কথাই বলে না। সে তো যুদ্ধ করে নাই। আমি কীভাবে তাকে শনাক্ত করি। এটা তো অন্যায়। এটা তো দেশের সঙ্গে গাদ্দারি। এখন তার ছেলেরাও কথা বলে না। নো ম্যাটার। কিন্তু অন্যায় করতে পারব না। অন্যায় করলে বাড়িঘর এমন টিনের থাকত না। দালানকোটা করতে চাইও না। অন্যায় করলে বেশিদিন টেকা যায় না। যারা করেছে জীবন দিয়ে ধ্বংস হয়ে গেছে।”
দেশের উন্নতি দেখলে মন ভরে যায় এই বীর মুক্তিযোদ্ধার। সরকার পদ্মাসেতু করেছে। সাধারণ মানুষ খেয়ে-পরে বাঁচছে। ফাইন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি আসছে। পাকিস্তান থাকলে এটা সম্ভব হতো না বলে মত দেন তিনি।
খারাপ লাগে কখন?
“সকল স্তরে চাটার দল দেখলে খুব খারাপ লাগে। বঙ্গবন্ধু নিজেই তো বলছে তোরা চুরি বাদ দে, ঘুষ বাদ দে, মানুষ হ। এটা তো হয় নাই।”
কী করলে দেশটা আরও এগিয়ে যাবে?
তিনি বলেন, “দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। প্রতিটি উপজেলায় ব্যবসা-বাণিজ্যের আরও সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। পাশাপাশি নতুন নতুন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। তাহলেই দেখবে দেশটা শেখ হাসিনার হাত ধরেই আরও এগিয়ে যাবে। বঙ্গবন্ধুর কন্যার প্রতি সে আস্থা আমাদের আছে। তবে আরও শক্ত হতে হবে তাকে।”
দেশে নানা সমস্যা থাকলেও আগামী প্রজন্মের হাত ধরেই এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ— এমনটাই বিশ্বাস বীরপ্রতীক আনিসুর রহমানের। চোখে মুখে আলো ছড়িয়ে তাদের উদ্দেশে তিনি অকপটে বলেন, “একাত্তরে স্বাধীনতার জন্য আমরা জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়টুকু উৎসর্গ করেছি। সেই স্বাধীন দেশটাকে তোমার হৃদয়ে ধারণ করো। ভালো কাজ করলে ভালো ফল অবশ্যই তোমরা পাবে। মানুষে মানুষে ভেদাভেদ করো না। তোমরা অনেক মেধাবী। আমরা যেটা পারিনি, নিশ্চয়ই তোমরা সেটা পারবে। তোমরাই হবে আগামী দিনের মুক্তিযোদ্ধা।”
লেখাটি প্রকাশিত হয়েছে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের মতমত বিভাগে, প্রকাশকাল: ২৭ জুলাই ২০২৩
© 2023, https:.